IQNA

কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন ব্যক্তিদের চরিত্র – ৩৪

একজন নবী যিনি ঊর্ধ্বাকাশে জীবিত রয়েছেন

20:01 - March 20, 2023
সংবাদ: 3473496
তেহরান (ইকনা): একজন নবী যিনি ঊর্ধ্বাকাশে জীবিত রয়েছেন।  তাফসীর ও রেওয়ায়তের আলোকে নবীগণের মধ্যে অল্প কয়েকজন বেঁচে রয়েছেন এবং তারা এখনো মৃত্যুবরণ করেননি। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন হযরত ইলিয়াস (আ.)। তাঁর কওমের লোকেরা চুক্তি ভঙ্গ করার যিনি আল্লাহ কাছে নিজের মৃত্যু কামনা করেছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তাকে আকাশে উঠিয়ে নেন এবং জীবিত রাখার মাধ্যমে পুরস্কৃত করেন।
হযরত ইলিয়াস (আ.) হলেন বনী ইসরাঈলের একজন নবী এবং হযরত হারুন (আ.)-এর বংশধরদের একজন। তিনি বা’লাবাক শহরে (লেবাননের একটি শহর) বনী ইসরাইলের রাজা আহাবের রাজত্বকালে নবী হিসেবে আগমন করেন। তিনি তাঁর কওমের লোকদেরকে আল্লাহর একত্ববাদ ও তাঁর আনুগত্যের আহ্বান করা এবং পাপ কাজকে পরিত্যাগ করার জন্য আদেশপ্রাপ্ত হন। তার প্রধান দায়িত্ব ছিল বনী ইসরাইলে রাজার সমর্থিত মূর্তিপূজা ও তার প্রসারতার বিরুদ্ধে মোকাবেলা করা।
বছরের পর বছর চেষ্টা করেও হযরত ইলিয়াস (আ.) যখন দেখলেন তার লোকেরা মূর্তিপূজা থেকে সরে আসছে না, তখন তিনি তাদের জন্য অনাবৃষ্টি কামনা করে অভিশাপ দেন। ফলে তারা দুর্ভিক্ষে পতিত হয়।
অনেক সময় ধরে এই দুর্ভিক্ষ অতিবাহিত হয় এবং অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করে। যখন তারা নিজেদের নিরুপায় দেখল, তখন তারা নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে হযরত ইলিয়াস (আ.)-এর ডকে সাড়া দিয়ে আল্লাহর ইবাদতের পথকে গ্রহণ করে। অতঃপর, হযরত ইলিয়াস (আ.)-এর দোয়ায়, প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং দুর্ভিক্ষের সময় শেষ হয়ে যায়। কিছু সময় পর, লোকেরা হযরত ইলিয়াস (আ.)-এর সাথে করা তাদের চুক্তি ভুলে গিয়ে পুনরায় মূর্তিপূজায় লিপ্ত হয়। হযরত ইলিয়াস (আ.) এই অবস্থা দেখে আল্লাহর কাছে নিজের মৃত্যু প্রার্থনা করেন, কিন্তু আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রাখেন এবং ঊর্ধ্বাকাশে নিয়ে যান।
হযরত ইলিয়াস (আ.) সম্পর্কে যে সকল মুজিযার কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে আছে, অসুস্থদেরকে সুস্থ করা এবং মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করা। 
পবিত্র কুরআনে ইলিয়াস (আ.)-এর নাম দুবার পৃথক দুটি সূরায় অর্থাৎ সূরা “মরিয়ম” ও সূরা “সফফাত” -এ উল্লেখ করা হয়েছে। এক স্থানে, তাকে হযরত জাকারিয়া (আ.), হযরত ঈসা (আ.) এবং হযরত ইয়াহিয়া (আ.)-এর সাথে একজন যোগ্য ব্যক্তি হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে আর অন্যত্র নবী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
অবশ্য সূরা ‘সাফাফাতে’ হযরত ইলিয়াস (আ.) -কে “আল-ইয়াসিন”নামে  স্মরণ করা হয়েছে। তবে কোন কোন মুফাসসির মনে করেন যে, হযরত ইদ্রিস (আ.)-ই মূলত হচ্ছেন হযরত ইলিয়াস (আ.)। কারণ তাদের সম্পর্কিত অনেক বৈশিষ্ট্য এবং ঘটনার মধ্যে সদৃশতা পাওয়া যায়।  এছাড়াও, কিছু লোক বিশ্বাস করে যে হযরত ইলিয়াস এবং হযরত খিযিরের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হল, তারা উভয়ই ঊর্ধ্বাকাশে গমন করেছেন এবং বেঁচে আছেন।
বাইবেলে হযরত ইলিয়াস (আ.)-কে “ইলিয়া” নামে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে। বাইবেলে হযরত ইলিয়াস (আ.) সম্পর্কিত বর্ণনার বেশিরভাগ ইসলামি রেওয়ায়াতে কমবেশি পার্থক্যের সাথে বর্ণিত হয়েছে।
উল্লেখিত ভাষ্য মতে অধিকাংশ তাফসীর-কারক মনে করেন যে, হযরত ইলিয়াস (আ.) মৃত্যুবরণ করেননি বরং তিনি জীবিতাবস্থায় ঊর্ধ্বাকাশে গমন করেছেন। তবে কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে, তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন এবং ইরান ও ইরাকের মতো স্থানগুলিকে তার সমাধিস্থল হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
কিওয়ার্ড: ইলিয়াস নবী, সূরা সফফাত, জীবিত নবী

 

captcha