IQNA

ইসলাম ও মধ্যপ্রাচ্যকে ধ্বংসে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের ফাঁদে সৌদি!

22:53 - November 12, 2017
সংবাদ: 2604304
আন্তর্জাতিক ডেস্ক ইসরাইল যে কোনো মুহূর্তে দক্ষিণ লেবাননে আক্রমণ করতে পারে। সৌদি আরবও যুগপতভাবে ইয়েমেনে প্রবেশ করতে পারে। ইসরাইল আক্রমণ হানার আগেই ‘গেম-চেঞ্জিং’ পদক্ষেপ হিসেবে ইরান হিজবুল্লাহকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিতে পারে। সৌদি আরব ও ইসরাইলের সঙ্গে সমান্তরালের অংশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত কাতারকে হয়রানি করতে পারে।

বার্তা সংস্থা ইকনা: যখন এই সব কিছু ঘটেছে অথবা ঘটছে, তখন তেহরান সরাসরি দুবাই আক্রমণ করতে পারে এবং এর কিছু পরেই ইরাকের কুয়েত আক্রমণ আবারো আলোচনায় আসতে পারে। ইসরাইলও সিরিয়ার গোলান মালভূমি এলাকায় আক্রমণ করতে পারে।
এই যুদ্ধ লোহিত সাগর থেকে পারস্য উপসাগরের বিভিন্ন ফ্রন্টে একযোগে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সৌদি উপদ্বীপ অগ্নিকুণ্ডে আচ্ছন্ন হতে পারে।

একটি কৌশলী ‘গেমের ছক' আঁকা হয়েছে

ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একটি বড় ধরনের গেমের পরিকল্পনার পর তা মঞ্চস্থ করা হয়েছে। এতে আমরা খুবই বিপর্যস্ত, উদ্বিগ্ন। গেম ইতোমধ্যে মঞ্চস্থ হয়েছে এবং খেলোয়াড় বা অভিনেতারা এ অঞ্চলেরই। স্থানীয় ক্ষমতাধরদের কাছে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। রিয়াদে ‘ক্লক সেট’ করা হয়েছে। আপনি অব্যাহতভাবে মনে করতে পারেন যে সৌদি আরবে যা ঘটেছে তা হচ্ছে দুর্নীতি বা সিংহাসন বা অর্থের জন্য লড়াই।
আপনি অব্যাহতভাবে মনে করতে পারেন যে, ‘একটি তরুণ সৌদি অভিজাত সম্প্রদায়’ গঠনে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান পুরানো স্টাফদের ছেঁটে ফেলার চেষ্টা করছেন। আপনি অব্যাহতভাবে মনে করতে পারেন যে, যাদের আটক করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।

সৌদি অভিজাতদের আটক ও বরখাস্তের তালিকা সিআইএ ও মোসাদ কর্তৃক তৈরি

যে গর্জন আমরা গত সপ্তাহে প্রত্যক্ষ করেছি এর মধ্য এটিও অন্তভুক্ত আছে। ঐতিহ্যগত সৌদি প্রশাসন, সৌদি ব্যবসায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল থেকে যারা কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন, তাদের প্রত্যেককেই আটক ও বরখাস্ত করা হয়েছে এবং হচ্ছে। যারা আঞ্চলিক যুদ্ধের বিরুদ্ধে, একইভাবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
যারা সৌদি-ইরান সংঘাতের বিরুদ্ধে, তাদেরও আটক কিংবা বরখাস্ত করা হচ্ছে। ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নতুন করে ঢেলে সাজানো সৌদি শাসন ব্যবস্থায় যাদের আপত্তি জানানোর সক্ষমতা রয়েছে- এমন সবাইকে ছুঁড়ে ফেলা হচ্ছে।
আমি নিশ্চিত যে রিয়াদের নতুন প্রশাসনের আটক ও বরখাস্তের তালিকা সিআইএ এবং মোসাদ কর্তৃক সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত করা হয়েছে এবং তা সৌদির হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। যেমনটি ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই তুরস্কের অভ্যুত্থানের জন্য কারা থাকবে সিআইএ ও মোসাদ কর্তৃক তার তালিকা তৈরি করা হয়েছিল।

তারা সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য ধ্বংস করতে যাচ্ছে

কিন্তু এই সবের পরেও অন্য আরেকটি বিষয় রয়েছে। আর এই বিষয়টি নিয়ে আসলেই আমরা উদ্বিগ্ন। পশ্চিমারা সমগ্র অঞ্চলটি ধ্বংস করার পরিকল্পনা করছে। এই ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনাজুড়ে নতুন গেমটি সাজানো হয়েছে। এই অঞ্চলে যুদ্ধ ও সঙ্কট এখন আর খুব বেশি দূরে নয়। নতুন এই সঙ্কট একটি ঝড় হিসাবে সমগ্র অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত হবে।
তারা এখন ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য সৌদি প্রশাসনের পুনর্বিন্যাস করছে। যারাই এই দৃশ্যকল্পের বিরুদ্ধে তাদের সবাইকে একে একে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। রিয়াদ ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইসরাইলের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছে। ইসরাইলের সঙ্গে একত্রে তারা প্রথমেই লেবাননকে আক্রমণ করতে অগ্রসর হচ্ছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত-সৌদি আরব-মিশর এই ত্রয়ীকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের তৈরি বর্ম এই অঞ্চলের ধ্বংস করবে। এটা এমন একটি ফ্রন্ট যা সৌদি আরবকে আত্মহত্যার জন্য টেনে নিয়ে যাবে। তারা দেশটিকে পুরোপুরি ধ্বংস করবে।

যুদ্ধ ইসলামের অন্তরে স্থানান্তর করা হচ্ছে

ইরানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শোডাউনের জন্যই এই ফ্রন্ট গঠিত হয়েছে। তবে, তাদের বাহিনী ইরানে পৌঁছানোর আগে তা লেবানন এবং ইয়েমেনকে মুছে ফেলবে। অন্যদিকে কাতারও প্রতিশোধ নিতে চাইবে।
উল্লেখ্য, ইরাক আক্রমণ, সিরিয়ান যুদ্ধ, ইয়েমেনের সংঘর্ষ নতুন এই সঙ্কট ও নতুন আঞ্চলিক যুদ্ধের পরিস্থিতির বাইরে নয়। এসব একই সূত্রে গাঁথা।
লোহিত সাগর থেকে পারস্য উপসাগর পর্যন্ত একাধিক ফ্রন্ট একযোগে সক্রিয় হতে যাচ্ছে। আর এই যুদ্ধ ইসলামের অন্তরে স্থানান্তরিত হচ্ছে।

সুন্নি-শিয়া যুদ্ধ নয়, এটি একটি আক্রমণ প্রকল্প

এটা আমাদের যুদ্ধ নয়। এই সুন্নি বা শিয়া যুদ্ধ নয়। এটি তুর্কি, আরব বা পারস্যের যুদ্ধ নয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও ক্রুসেডের পর এটিই হচ্ছে সবচেয়ে ধবংসাত্মক হুমকিগুলোর একটি।
আমাদের জাতীয় পরিচয়, সাম্প্রদায়িক পরিচয় এবং আমাদের মধ্যে সব ধরনের বিরোধ ভুলে গিয়ে এই ঝড়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে, দৃঢ় হাতে প্রতিবাদ করতে হবে। কারণ এটি আমাদের যুদ্ধ নয়; আমাদের অঞ্চলে লুটপাট ও এটিকে টুকরো টুকরো করতে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের একটি প্রকল্প এবং এই প্রকল্প ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
সৌদি আরব লেবাননে তার নাগরিকদের অবিলম্বে দেশটি ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছে। ইসরাইল গত কয়েক দিন ধরেই হামলার জন্য মহড়া দিচ্ছে। লেবাননের মাধ্যমে হিজবুল্লাহ সিরিয়াতে তার ইউনিট সম্প্রসারিত করেছে। হুতিরা তাদের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো গুদামের বাইরে নিয়ে আসছে।

আমাদের সবাইকে একসঙ্গে এর বিরুদ্ধে রূখে দাঁড়ানো প্রয়োজন

যদি এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো না হয়, যদি পরিকল্পনাটি ধ্বংস না হয়, যদি সংযুক্ত আরব আমিরাতকে থামানো না যায়, যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের তত্ত্বগুলোকে অকার্যকর করা না যায়, তাহলে নিশ্চতভাবেই একটি আঞ্চলিক সঙ্কট আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
দয়া করে মনে রাখবেন সৌদি আরব এই পরিকল্পনায় হেরে যাবে। এটি আসলেই একটি ফাঁদ; যার অন্যতম টার্গেট হচ্ছে সৌদি আরব। কিন্তু এটি পুরো অঞ্চলকে ধ্বংস করবে। সম্ভবত কোনো দেশ নতুন এই সঙ্কটের বাইরে থাকতে পারবে না।
আঞ্চলিক পর্যায়ে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের সবাইকে একসাথে এই আঞ্চলিক যুদ্ধক্ষেত্রকে অকার্যকর করতে হবে এবং আমাদের এই অঞ্চল ও আমাদের দেশগুলোকে রক্ষা করতে হবে।
আমাদেরকে অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে। ইয়েনি সাফাক ডটকম অবলম্বনে
captcha