IQNA

কারবালা বিপ্লবের সংরক্ষক হযরত ইমাম সাজ্জাদের (আ.) শাহাদাত

17:04 - October 14, 2016
সংবাদ: 2601761
কারবালার মহাট্র্যাজেডির ৩৪ বছর পর ৯৫ হিজরির ১২ মহররম ৫৭ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেছিলেন হযরত ইমাম যইনুল আবেদীন (আ.)। ষষ্ঠ উমাইয়া শাসক ওয়ালিদ ইবনে আবদুল মালিক বিষ প্রয়োগ করে এই মহান ইমামকে শহীদ করে।
কারবালা বিপ্লবের সংরক্ষক হযরত ইমাম সাজ্জাদের (আ.) শাহাদাত
বার্তা সংস্থা ইকনা: ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.)ঐশী আলো এবং পিতা ইমাম হোসাইন (আ.) এর ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠে নিজেকে সর্বোচ্চ ফযীলতের ঐশ্বর্যে অলংকৃত করেন। তাঁর জীবনের ২৩ বছরের বেশি সময় না পেরুতেই পিতা ইমাম হোসাইন (আ.) এর জীবনে নেমে আসে কারবালার সেই ঐতিহাসিক বিপর্যয়কর ঘটনা।

কিন্তু ইমাম সাজ্জাদ (আ.) অসুস্থতার কারণে কারবালার সেই মহাদুর্যোগপূর্ণ ঘটনায় অংশ নিতে পারেন নি। ইতিহাস থেকে প্রমাণিত যে এই ব্যাপারটি আসলে আল্লাহর ইচ্ছাতেই ঘটেছে অর্থাৎ ইমাম সাজ্জাদকে জীবিত রাখার স্বার্থে তাঁর অসুস্থতার ব্যাপারটি ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে। কারণ আল্লাহ চেয়েছেন ইমাম হোসাইন (আ.) এর শাহাদাতের পর তিনি যেন ইসলামের পতাকা উড্ডীন রাখেন।

ইমাম সাজ্জাদ (আ.) এর জীবনকাল কেটেছে এমন একটা সময়ে যখন আহলে বাইতের জন্যেই পরিস্থিতি ছিল খুবই কঠিন এবং প্রতিকূল। এ রকম এক সংবেদনশীল সময়ে উমাইয়া বংশীয় খলিফারা চেয়েছিল জনগণের কাছে নবীজীর আহলে বাইতের মর্যাদা হ্রাস করতে। সেই লক্ষ্যে তারা ইমাম সাজ্জাদ (আ.) সহ সমগ্র আহলে বাইত এবং তাঁদের অনুসারীদের ওপর কঠোরতা আরোপ করে। সেজন্যে ইমাম বাধ্য হয়েছিলেন শাসকদের প্রচারিত সকল বিভ্রান্তি থেকে জনগণকে মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্যে সংগ্রাম করতে। তিনি প্রকৃত ইসলামের বার্তা জনগণের সামনে তুলে ধরে উমাইয়াদের বিকৃতি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তোলেন। ইমাম সাজ্জাদ অবশ্য পিতার শাহাদাতের পর কী বন্দীজীবন আর কী কারবালা বিপর্যয় পরবর্তীকাল-সবসময়ই তিনি অন্যায় এবং জুলুমের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

অত্যন্ত সচেতনভাবে এবং সুকৌশলে ইমাম হোসাইন (আ.)এর কারবালা বিপ্লবের স্মৃতিকে জনগণের মাঝে জাগ্রত রাখার মহান কাজটি আঞ্জাম দিয়েছেন। ইমাম হোসাইন (আ.) কেন কারবালায় শাহাদাতবরণ করলেন,কী ছিল তাঁর মিশন-সেইসব গূঢ়ার্থ এবং মূল্যবোধগুলো জনগণের সামনে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতেন ইমাম সাজ্জাদ (আ.)। সেইসাথে ইসলামের উচ্চতর স্বরূপ তুলে ধরা এবং সকল প্রকার বিচ্যুতি ও বেদআতের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তার কথা জনগণের সামনে তুলে ধরা তাঁর একান্ত কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল।

সাজ্জাদ মানে হলো যিনি অনেক বেশি বেশি সিজদাহ করেন। এটা ছিল তাঁর অনেকগুলো উপাধির একটি। আল্লাহর ইবাদাতের ক্ষেত্রে ইমাম সাজ্জাদ (আ.) ছিলেন অত্যন্ত নিষ্ঠাবান এবং সদাসচেষ্ট। তাঁর জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়গুলো কাটতো আল্লাহর সাথে একান্তে এবং নিঃসঙ্গ মুহূর্তে আপন প্রয়োজনীতার কথা পেশ করার মধ্য দিয়ে। তৎকালীন একজন প্রসিদ্ধ আবেদ ছিলেন হাসান বসরি। তিনি বলেছেন-একদিন আল্লাহর ঘরের পাশে ইবাদাত করছিলাম। দেখলাম আলী ইবনে হোসাইন অর্থাৎ ইমাম সাজ্জাদ (আ.) আল্লাহর ইবাদাতে মশগুল আছেন। তাঁর ইবাদাতের ভঙ্গি বা ধরন ছিল খুবই আকর্ষণীয়। তাঁর কথাবার্তা এতো বেশি মনোমুগ্ধকর ছিল যে,আনমনেই তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে গেলাম।

captcha