IQNA

কারবালার শহীদদের ৭টি দল

4:47 - August 13, 2022
সংবাদ: 3472281
তেহরান (ইকনা): কারবালায় যারা শহীদ হয়েছেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর সাহাবীদের মধ্যে ছিলেন এবং নবী করিম (সা.)-এর সময়ে সংঘটিত যুদ্ধে তারা অংশগ্রহণ করেছেন। শৈশবে ইমাম হুসাইন (আ.)-কে রাসূল (সা.)-এর সাথে দেখেছেন এবং তাঁর সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট হতে অনেক হাদিস শুনেছেন।
কারবালায় হযরত আবা আবদুল্লাহ আল-হুসাইন (আ.)-এর বিপ্লবে যারে সহযোগিতা করেছেন, তাদেরকে সাতটি দলে উল্লেখ করা যেতে পারে। প্রথম দল হল সেই শহীদ যারা ইমাম হুসাইন (আ.) কারবালায় আসার পূর্বে শহীদ হয়েছিলেন। আর এই দলের নেতা সুলাইমান বিন রাজিন। তিনি বসরায় শহীদ হয়েছিলেন। তিনি ইমামের বার্তা বাহক ছিলেন এবং তিনি হযরত আবা আবদুল্লাহর পক্ষে ছিলেন বলে জানার পর উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ তাকে গ্রেফতার করে শহীদ করে এবং তারপর কুফার দিকে চলে যায়।
মুসলিম বিন আকিল, কায়স বিন মাসহার এবং আবদুল্লাহ বিন ইয়াকতারের মতো ব্যক্তিরাও এই দলের অন্তর্ভুক্ত, যারা ইমাম হুসাইনের (আ.) আন্দোলন এবং কারবালায় তার আগমনের আগে শহীদ হয়েছিলেন। এই দলের অন্যতম নেতা কুফার মেইসামে তাম্মার।
হযরত আবা আবদুল্লাহর (আ.) সাহাবীদের দ্বিতীয় দল হলেন যারা আশুরার সকালে তীরের বৃষ্টিতে শহীদ হন।
আশুরার সকাল শুরু হয়েছিল তীর নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে এবং উমর সাদই সর্বপ্রথম তীর নিক্ষেপ করা শুরু করেছিল এবং তীর নিক্ষেপের ফলে ইমাম হুসাইনের (আ.) ৫২জন সঙ্গী শহীদ হন।
কারবালায় যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর রাসূল (সা.) এর সাহাবী ছিলেন এবং নবী করিম (সা.)-এর সময়ে সংঘটিত যুদ্ধে তারা অংশগ্রহণ করেছেন। শৈশবে ইমাম হুসাইন (আ.)কে নবীর (সা.) সাথে দেখেছেন এবং তাঁর সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট হতে অনেক হাদিস শুনেছেন। তাদের মধ্যে ছিলেন কারবালার শহীদ হাবিব বিন মাযাহের এবং মুসলিম বিন আউসজা।
শহীদদের তৃতীয় দল হল যারা আশুরার দিনে কারবালার ময়দানে এক এক করে অথবা কয়েক জন মিলে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। যেমন, যারা বসরা থেকে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর খেদমতে এসেছেন, তারা দলবদ্ধ হয়ে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। মাঝে মধ্যে শত্রুপক্ষ তাদেরকে ঘিরে ফেলতো এবং হযরত আব্বাস (আ.) ময়দানে যেয়ে অবরোধ ভেঙ্গে তাদেরকে ফিরিয়ে আনতেন। পুনরায় তারা ময়দানে ফিরে যেতেন এবং আহত হতেন ও শাহাদাত বরণ করতেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন আব্দুল বিন উমাইর কালবী। একা একা সরাসরি যুদ্ধে সর্বশেষে যে শাহাদাত বরণ করেন তিনি হলেন হাবিব বিন মাজাহের আসাদী। তিনি ইমাম হুসাইন (আ.)-এর বাম শাখার কমান্ডার ছিলেন।
শহীদদের পরবর্তী দল হচ্ছেন কারবালার শহীদদের চতুর্থ দল। এই দলের শহীদগণ আশুরার দিনে জোহরের নামাজের সময় শাহাদাত বরণ করেন। ইমাম হুসাইন (আ.) জোহরের আযানের সময় শান্তিপূর্ণভাবে নামাজ আদায়ের জন্য এবং যুদ্ধ বিরতির জন্য হযরত আবুল ফজল আব্বাস (আ.)-কে শত্রুদের কাছে পাঠিয়েছিলেন। যুদ্ধের ময়দানে সালাতুল খাউফ আদায় করা হয়। আর এজন্য ইমাম হুসাইন (আ.) দুই রাকাত খাউফের নামাজ আদায় করেন। এই দুই রাকাত নামাজ আদায় করার সময় ইমামের দলের দুই জন সেনা শহীদ হন।
শহীদদের পরবর্তী দল হচ্ছেন যারা নামাজের পর শহীদ হয়েছেন। ইমামের এসকল সাথীগণ এক এক করে রণক্ষেত্রে গিয়েছেন এবং শাহাদাত বরণ করেছেন। আশুরার দিনে জোহরের নামাযের পর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য শহীদদের একজন হলেন জুহাইর বিন কাইন, যিনি একজন মহান ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি হযরত আবা আবদুল্লাহ আল হুসাইন (আ.)এর সৈন্যবাহিনীর ডান শাখার দায়িত্বে ছিলেন এবং পথে তাঁর সাথে যোগ দেন।
এই কয়েকজন লোক শহীদ হওয়ার পর, বনি হাশিমের পালা, অর্থাৎ হযরত আবা আবদুল্লাহ আল-হুসাইনের পরিবার, যেমন আকিলের সন্তান, ইমাম হাসান মুজতবা (আ.)-এর সন্তান, আমিরুল মু’মিনিনেরর (আ.) সন্তান; অর্থাৎ ইমাম হুসাইন (আ.)-এর ভাইয়েরা আবুল ফজল আল-আব্বাস, জাফর, উসমান এবং আবদুল্লাহ। এর পর ইমাম হুসাইন (আ.) শহীদ হন এবং কারবালার ঘটনার পর এই মহা ট্রাজেডিকে কেন্দ্র করে অনেকে শহীদ হন।
সর্বশেষ যে ব্যক্তি কারবালায় উপস্থিত ছিলেন এবং শহীদ হয়েছেন, তিনি বসরা থেকে কারবালায় পৌঁছেছিলেন। কিন্তু তিনি দেরিতে পৌঁছেছিলেন এবং তিনি যখন পৌঁছেছিলেন তখন শত্রুপক্ষের সৈন্যরা আনন্দ ও উল্লাস করছিল। তিনি বুঝতে পারেন যে হযরত আবা আবদুল্লাহ শহীদ হয়েছেন, তাই তিনি তরবারি নিয়ে কারবালা চত্বরে যুদ্ধ করেন এবং শহীদ হন। তার নাম হাফহাফ বিন মোহান্দ রাসবি বসরী। আর এই শহীদকে কারবালার শেষ শহীদ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।
* কুরআন বিষয়ক বার্তা সংস্থা “ইকনা”র সাথে লেখক ও আশুরা গবেষক মোহাম্মদ রেজা সাঙ্গির একান্ত সাক্ষাৎকার থেকে নেওয়া
 
 
 

 

captcha