এর আগে জাকজাকির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তার পক্ষে আইনি লড়াইয়ে নিয়োজিত আইনজীবীরা। কাদুনা হাইকোর্টের এই রায় কেবল জাকজাকি দম্পতিরই বিজয় নয়, এ বিজয়কে নাইজেরিয় ইসলামী আন্দোলন বা আইএমএন-এর বিজয় হিসেবেও দেখা হচ্ছে। ২০১৫ সাল থেকে কারাগারে রয়েছেন নাইজেরিয়ার ইসলামিক মুভম্যান্টের নেতা আল্লামা জাকজাকি।
২০১৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর নাইজেরিয়ার সশস্ত্র বাহিনী ইমাম হুসাইন (আ)'র শাহাদাতের শোক অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে প্রায় দুই হাজার নাইজেরিয় শিয়া মুসলমানকে হতাহত করে। ওই হামলায় আল্লামা জাকজাকি মারাত্মকভাবে আহত হন এবং আঘাতের কারণে তার একটি চোখ বিনষ্ট হয় এবং অন্যটিও প্রায় অচল হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এরপর থেকে আল্লামা জাকজাকিকে কারাগারে অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থায় রেখে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত সেবা থেকেও বঞ্চিত করা হয়।
জাকজাকির বিরুদ্ধে এক গাদা মিথ্যা অভিযোগ দাঁড় করিয়ে সেসবের ব্যাপারে জোর করে তার স্বীকারোক্তি আদায়ের ব্যাপক চেষ্টা করা হলেও তিনি ধৈর্য ও দৃঢ়তা বজায় রেখে নিজ অবস্থানে অবিচল থেকেছেন। ফলে আল্লামা জাকজাকি এখন ধৈর্য ও প্রতিরোধের প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে জাকজাকিকে গ্রেফতারের পর থেকে নাইজেরিয়ার শিয়া মুসলমানদের ওপর সরকারি নিপীড়ন জোরদার হয়।
আশুরা ও তাসুয়ার শোকানুষ্ঠানসহ দেশটির শিয়া মুসলমানদের ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠান ও তৎপরতা নিষিদ্ধ করা হয় এবং তাদের সভা-সমাবেশগুলো পুলিশ ও সরকারি পেটোয়া বাহিনীর কঠোর দমন নীতির শিকার হয়েছে। আসলে শিয়া মুসলমানদেরকে নাইজেরিয়ার রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গন থেকে মুছে ফেলার বা অন্তত দুর্বল করার নীতি গ্রহণ করেছিল নাইজেরিয় সরকার। আর এতে ইন্ধন জুগিয়েছে মার্কিন-সৌদি-ইসরাইলি শক্তিগুলো। আধিপত্যকামী এই শক্তিগুলোর উদ্যোগে সৃষ্ট প্রচার অভিযানে ইসলাম-আতঙ্ক সৃষ্টির পরিকল্পনার আলোকে আইএমএনকে ওয়াহাবি তাকফিরি গোষ্ঠী বোকো হারামের সঙ্গে তুলনা করা হয়।
অথচ দায়েশ বা কথিত আইএসপন্থী বলে ঘোষণা দেয়া বোকো হারামের নীতিমালার পুরোপুরি বিপরীত নীতি অনুসরণ করে আইএমএন বা ইসলামিক মুভম্যান্ট অফ নাইজেরিয়া। নাইজেরিয়ায় রয়েছে গ্যাস ও তেলের মজুদসহ নানা ধরনের দামি খনিজ সম্পদ। ফলে এই দেশটির ওপর হস্তক্ষেপকামী নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব রাখতে সচেষ্ট রয়েছে সৌদি-মার্কিন-ইসরাইলি গ্রুপের শক্তিগুলো। আর এইসব শক্তিকে সন্তুষ্ট রাখতেই নাইজেরিয় সরকার দেশটির শিয়া মুসলমানদের ওপর দমন-পীড়ন জোরদার করে, বিশেষ করে তাদের ইঙ্গিতেই জাকজাকিকে গ্রেফতার করা হয় যাতে জনগণের ওপর তার প্রভাব কমে আসে।
নাইজেরিয় সরকার এখন জাকজাকি সম্পর্কিত যে কোনো সংবাদ প্রচারকেও ভয় পায়। কারণ অত্যন্ত প্রভাবশালী এই নেতা একাই নাইজেরিয়ার অন্তত এক কোটি মানুষকে তার অনুগামী ও অনুরাগীতে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছেন। অবশেষে সৌদি-মার্কিন-ইসরাইলি গোষ্ঠীর মদদপুষ্ট নাইজেরিয় সরকারের মামলা ও হামলা শেষ পর্যন্ত সত্যের শক্তির কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছে। বিচার প্রক্রিয়ায়ও ও্ইসব শক্তির নানা ধরনের বাধা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। আল্লামা শেখ জাকজাকি শিগগিরই মুক্তি পাবেন ও নাইজেরিয়ার ইসলামী আন্দোলন নব উদ্যমে আবারও জোরালো হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। সূত্র : পার্সটুডে